Table of Contents
গ্যামেটোজেনেসিস কি ?
গ্যামিটোজেনেসিস (Gametogenesis):
যৌন প্রজননক্ষম প্রাণীতে জননকোষ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে গ্যামিটোজেনেসিস বলে।
যৌন জননক্ষম প্রাণীরা দু’ধরনের কোষ বহন করে, যথা-দেহকোষ (Somatic cells) ও জার্মিনাল কোষ (Germinal Cells)। উভয় ধরনের কোষেই ডিপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোজোম (21) থাকলেও এদের কাজে পার্থক্য রয়েছে। দেহকোষ প্রাণিদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠন করে এবং জার্মিনাল কোষের পরিস্ফুটনের আবহ সৃষ্টি করে। এরা সবসময়ই মাইটোটিক কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটায়। অন্যদিকে, জার্মিনাল কোষ গঠন করে প্রাণীর জননাঙ্গ অর্থাৎ শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়। জার্মিনাল কোষগুলো পর্যায়ক্রমিক মাইটোটিক ও মায়োটিক বিভাজনের মাধ্যমে জননকোষ উৎপন্ন করে।
আরও জানুনঃ দ্রুত বীর্য পাতের চিকিৎসা ? দ্রুত বীর্য পাতের প্রাকৃতিক চিকিৎসা এবং দ্রুত বীর্য পাত রোধের উপায় ?
শুক্রাণু (Spermatozoan or Sperm ও ডিম্বাণু বা ডিম (Ovum or Egg)কি ?
পুরুষ জননকোষকে শুক্রাণু (Spermatozoan or Sperm) এবং শ্রী জননকোষকে ডিম্বাণু বা ডিম (Ovum or Egg) বলে। এদের সৃষ্টি প্রক্রিয়াকে যথাক্রমে স্পার্মাটোজেনেসিস ও উওজেনেসিস বলে। নিচে এদের বর্ণনা দেয়া হলো।
স্পার্মাটোজেনেসিস কাকে বলে ?
স্পার্মাটোজেনেসিস (Spermatogenesis):
শুক্রাণু উৎপন্নের প্রক্রিয়াকে স্পার্মাটোজেনেসিস বলে। পুরুষ জননাঙ্গে অর্থাৎ শুক্রাশয়ে এ প্রক্রিয়া ঘটে। মেরুদন্ডী প্রাণিদের শুক্রাশয় অসংখ্য সেমিনিফেরাস নালিকা (Seminiferous tubules) নিয়ে গঠিত। এসব নালিকার প্রাচীর জার্মিনাল এপিথেলিয়াম-এর কোষে আবৃত থাকে। অবশ্য স্তন্যপায়ী প্রাণীতে জার্মিনাল কোষগুলোর ফাঁকে ফাঁকে দেহকোষও দেখা যায়। এদের সারটলি কোষ (Sertoli cells) বলে। এরা বৃদ্ধিশীল শুক্রাণুকে পুষ্টি সরবরাহ করে।
infertility & Health tips এর আপডেট তথ্য পেতে google news” অনুসরণ করুন।
স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়া
স্পার্মাটোজেনেসিস একটি বিরামহীন প্রক্রিয়া। তবে সমগ্র প্রক্রিয়াটিকে বর্ণনার সুবিধার জন্য দুটি প্রধান
শিরোনামের অন্তর্ভুক্ত করা হয় : (ক) স্পার্মাটিড সৃষ্টি ও (খ) স্পার্মিওজেনেসিস বা শুক্রাণুতে রূপান্তর
স্পার্মাটিড সৃষ্টি
যে সব পুং জার্মিনাল কোষ থেকে শুক্রাণু উৎপন্ন হয় তাদের জনন মাতৃকোষ [বা মুখ্য জার্মিনাল কোষ বা প্রিমোর্ডিয়াল কোষ (Primary germinal cells or Primordial cells)] বলে। স্পার্মাটিড সৃষ্টির জন্য এসব
কোষকে তিনটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয় : (১) সংখ্যাবৃদ্ধি পর্যায় (Multiplication phase), (২) বৃদ্ধি পর্যায় ( Growth phase) এবং (৩) পূর্ণতা পর্যায় (Maturation phase)।
→ (১) সংখ্যাবৃদ্ধি পর্যায় : অবিভেদিত জনন মাতৃকোষ যে নিউক্লিয়াস বহন করে তা বেশ বড় আকৃতির এবং ক্রোমাটিন-সমৃদ্ধ। উপর্যুপরি মাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে এরা সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়। সৃষ্ট কোষগুলোকে স্পার্মাটোগোনিয়া (Spermatogonia) বলে। কোষগুলো ডিপ্লয়েড (2n) সংখ্যক ক্রোমোজোম বহন করে।
→ (২) বৃদ্ধি পর্যায় ঃ এ পর্যায়ে স্পার্মাটোগোনিয়া বিপুল পরিমাণ পুষ্টিদ্রব্য ও ক্রোমাটিন পদার্থ সঞ্চয় করে।
তখন প্রত্যেক কোষকে মুখ্য বা প্রাইমারী স্পার্মাটোসাইট (Primary spermatocyte) বলে।
→ (৩) পূর্ণতা পর্যায় ঃ মুখ্য স্পার্মাটোসাইটগুলো এ পর্যায়ে প্রথম মায়োটিক বিভাজনের জন্য প্রস্তুত হয়। এ বিভাজনের ফলে এমন দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয় যারা হ্যাপ্লয়েড অর্থাৎ n সংখ্যক (মাতৃকোষ অপেক্ষা অর্ধেক) ক্রোমোসোম বহন করে। তখন এদের গৌণ বা সেকেন্ডারী স্পার্মাটোসাইট (Secondary spermatocyte) বলে। প্রত্যেকটি সেকেন্ডারী স্পার্মাটোসাইট দ্বিতীয় মায়োটিক বিভাজন শেষে দুটি করে মোট চারটি স্পার্মাটিড (Spermatid) উৎপন্ন করে।
এভাবে, একটি মায়োটিক বিভাজনের মাধ্যমে একটি ডিপ্লয়েড স্পার্মাটোলোনিয়াম (Spermatogonium – একবচনে) থেকে চারটি হ্যান্ড্রয়েড (n) স্পার্মাটিড উৎপন্ন হয়। এরা এ অবস্থায় জননকোষরূপে কাজ করতে পারে না, বরং কিছু রূপান্তরের প্রয়োজন দেখা দেয়।
স্পার্মিওজেনেসিস বা শুক্রাণুতে রূপান্তর ?
মায়োটিক বিভাজনের পর একেকটি স্পার্মাটোগোনিয়াম থেকে অবশেষে চারটি সমান আকৃতির স্পার্মাটিড সৃষ্টি হয়। জননকোষের যে অবস্থাটি স্ফীতকায় ও বিপুল পরিমাণ সাইটোপ্লাজমযুক্ত এবং হ্যাপ্লয়েড, তাকে স্পার্মাটিড বলে। সক্রিয় জননকোষরূপে আত্মপ্রকাশের আগে এদের এক জটিল পরিবর্তনের প্রক্রিয়া অতিক্রম করতে হয়। স্পার্মাটিডদের জটিল পরিবর্তন প্রক্রিয়া অতিক্রম শেষে শুক্রাণুতে রূপান্তরকে স্পার্মিওজেনেসিস বলে।
স্পার্মিওজেনেসিসের সময় নিম্নেবর্ণিত নিউক্লিওলাস এবং অধিকাংশ প্রোটিন ত্যাগ করে। হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোসোম সেটের DNA শুধু অপরিবর্তিত থাকে। ক্রোমাটিনগুলো দলা পাকিয়ে ছোট আয়তনের সৃষ্টি করে। এর সংকোচনের ফলে বিভিন্ন প্রাণীর শুক্রাণু—নিউক্লিয়াস বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে [মানুষ ও ষাঁড়ের শুক্রাণু—নিউক্লিয়াস ডিম্বাকার ও পাশাপাশি চাপা; ইঁদুর ও উভচর প্রাণীর শুক্রাণু-নিউক্লিয়াস ধনুকফলা তরবারির মতো; এবং পাখিতে কর্কস্কুর মতো প্যাঁচানো]। নিউক্লিয়াসের আকৃতি শুক্রাণুর মাথারও আকৃতি প্রদান করে।
পরিবর্তনগুলো ঘটতে দেখা যায় । ১। নিউক্লিয়াসে পরিবর্তন ঃ নিউক্লিয়াস তার সম্পূর্ণ তরল, RNA,
• ২। অ্যাক্রোসোম সৃষ্টি :শুক্রাণু-নিউক্লিয়াসের সম্মুখ প্রান্তে অনেকটা সুঁচালো অ্যাক্রোসোম গঠিত হয়। এটি পানি—বিশ্লেষী এনজাইমে পূর্ণ থাকে। এ এনজাইম ডিম্বাণু ঝিল্লি বিগলনের মাধ্যমে শুক্রাণুর প্রবেশ সহজতর করে নিষেক নিশ্চিত করে। গলগি বডি থেকে অ্যাক্রোসোম সৃষ্টি হয়। শুক্রাণু—নিউক্লিয়াসের সম্মুখে প্রথমে গলগি বডি জড়ো হয়। এর একটি বা দুটি গহ্বর বড় হয়ে নালিকাগুলোর মাঝখানে জায়গা করে নেয়। দ্রুত গহ্বরের অভ্যন্তরে একটি গাঢ় দানার সৃষ্টি হয়। এর নাম প্রোঅ্যাক্রোসোমাল দানা (Proacrosomal granule)। এ দানা নিউক্লিয়াসের সম্মুখ প্রান্তে যুক্ত হয় এবং বড় হয়ে অ্যাক্রোসোমে পরিণত হয়। গলগি গহ্বরে দ্বিস্তরী লাইপো-প্রোটিনের আবরণটি অ্যাক্রোসোমকে আবৃত করে টুপির মতো গঠনে রূপ নেয়। গলগি বডির বাকি অংশগুলো শুক্রাণু থেকে বর্জিত হয়।
→ ৩। অক্ষীয় সূত্র বা ফ্ল্যাজেলাম গঠন : সেন্ট্রিওল দ্বিধাবিভক্ত হয়ে নিউক্লিয়াসের পেছনে একটির পর আরেকটি সজ্জিত হয়। যে সেন্ট্রিওলটি নিউক্লিয়াসগাত্রে একটি গর্তের মতো স্থানে বসানো থাকে তাকে নিকটবর্তী সেন্ট্রিওল
– অ্যাক্রোসোম
(Proximal centriole) বলে। এর পেছনেরটিকে বলে দূরবর্তী সেন্ট্রিওল (Distal centriole)। দূরবর্তী সেন্ট্রিওল ব্যাসাল বডি-তে পরিণত হয়ে শুক্রাণুর লেজের অক্ষীয় সূত্র (Axial filament) বা ফ্ল্যাজেলাম গঠন করে।
৪। মধ্যাংশ গঠন : মাইটোকনড্রিয়া শুক্রাণুর মাথা ও লেজের সংযোগস্থলে এসে একীভূত হয় এবং প্যাঁচ খেয়ে মধ্যাংশ গঠন করে। শুক্রাণু-লেজের চলন শক্তি মাইটোকনড্রিয়া থেকেই আসে। স্পার্মাটিডের বেশীর ভাগ সাইটোপ্লাজমই বর্জিত হয়। আশে-পাশের অবলম্বন দানকারী সারটলি কোষ কোষভক্ষণ প্রক্রিয়ায় (Phagocytosis) তা গ্রহণ করে নেয়। পরিণত শুক্রাণু শুধুমাত্র নিউক্লিয়াসধারী মস্তক, মাইটোকনড্রিয়াবাহী মধ্যখণ্ড ও অক্ষীয় সূত্রযুক্ত একটি লেজ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে।
রিলেটেড ট্যাগঃ গ্যামেটোজেনেসিস কি, স্পার্মাটোজেনেসিস কাকে বলে, স্পার্মাটোজেনেসিস কি, স্পার্মাটোজেনেসিস প্রক্রিয়া,স্পার্মাটোজেনেসিস কাকে বলে ?