Table of Contents
নেফ্রাইটিস কি ?
- নেফ্রাইটিস হলো কিডনী ইনফেকশন । নেফ্রাইটিস বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি তীব্র বা দীর্ঘ সময়ের জন্য হতে পারে।
কিডনি রোগের লক্ষণ সমূহ কি কি?
- প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া;
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া;
- লাল প্রস্রাব হওয়া;
- প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হওয়া ;
- কোমরের দুই পাশে এবং তলপেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে;
- শরীর-মুখ ফোলা যেতে পারে;
infertility & Health tips এর আপডেট তথ্য পেতে google news” অনুসরণ করুন
উপরোক্ত কারণ সূহ লক্ষণ কিডনি রোগের লক্ষণ হতে পারে ।
নেফ্রাইটিস কয়েকটি ঘটনা ?
ঘটনা ১ : বার বছরের এক বালককে নিয়ে তার বাবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হলেন । ছেলের বাবা ডাক্তারকে জানান, বেশ কিছুদিন থেকে তার ছেলের শরীরে খোস-পাঁচড়া । বেশীর ভাগ পাচড়াই দু’ পায়ের নীচের অংশে বিদ্যমান । ৩-৪ সপ্তাহ পূর্বে হঠাৎ তা পেকে যায় কিন্তু ডাক্তারের নিকট আর যাওয়া হয়নি । ৪-৫ দিন পূর্বে হঠাৎ দেখা যায় তার মুখমন্ডল ফুলে উঠেছে এবং প্রস্রাব কমে গিয়েছে । প্রস্রাবের রং লালচে, ঠিক যেন গুড়ো ইটের মত । শরীরটাও ২-৩ দিনে ফ্যাকাসে হয়ে উঠেছে এবং সাথে সাথে ছেলে খাওয়া-দাওয়াও কমিয়ে দিয়েছে।
ঘটনা ২ : পাঁচ বছরের এক মেয়ে এসেছে শরীর ফোলা নিয়ে । তবে তার কোন খোস- পাঁচড়া নেই । ৩ সপ্তাহ পূর্বে হঠাৎ তার ঠান্ডা লাগে এং গলা ব্যাথা শুরু হয় । তার বাবা- মা গুরুত্ব দেননি । টনসিল হয়েছে ভেবে ৩-৪ দিন অপেক্ষা করতে বলেছিলেন এবং সাথে সাথে গরম পানি ও লবন দিয়ে গড়গড়া করতে বলেছিলেন । এতে মেয়েটি কিছুটা আরাম বোধ করেছে ঠিকই; কিন্তু একদিন হঠাৎ তার বাবা-মা লক্ষ্য করেন মুখমন্ডল ফুলে উঠেছে। প্রস্রাবও অত্যাধিক কমে গেছে এবং তা রক্তবর্ণের হচ্ছে । তার বাবা-মা দু’জনেই ব্যস্ত হয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটে গেলেন ।
ঘটনা ৩: রোগীর বয়স মাত্র এক বছর, দেখতে সুন্দর । গলা ব্যাথা বা খোস-পাঁচড়া কিছুই হয়নি । তবুও তার বাবা-মা লক্ষ্য করেন যে, মুখে পানি এসেছে । ফলে মুখমন্ডল ফুলে উঠেছে এবং কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে, প্রস্রাব কমে গেছে কিন্তু প্রস্রাবের রঙের কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি ।
এ তিনটি রোগীই ডাক্তারের চিকিৎসাধীন থেকে দিন দিন উন্নতি লাভ করেছে । আশা করা যায় শিগগিরই সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভও করবে। ডাক্তার অবশ্য বলেছেন যে, আরোগ্য লাভের পরেও বেশ কিছু সময় (প্রায় ১৬ বৎসর) তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন এবং বৎসরে এক অথবা দু’বার কিডনীর বিষয় সংক্রান্ত রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করতে হতে
সুতরাং নেফ্রাইটিস সাধারণ কয়েক প্রকারের এবং কয়েকভাবে উপসর্গ নিয়ে আসতে পারে। রোগীর বয়স, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনীর কার্যকারিতা ও কিডনীর বায়োপসি রিপোর্টের উপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা পদ্ধতি ও ভবিষ্যতের ফলাফল ।
কিডনী ও মূত্রণালীর সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই কি ?
কিডনী এবং মুত্রণালীর রোগজীবাণু জনিত সংক্রমণকে ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই বলে । কিডনী এবং পেলভিসের ইনফেকশনকে উপরের মূত্রণালীর ইনফেকশন বলে । একে একিউট পাইলোনেফ্রাইটিসও বলা হয় । যখন কিডনীতে স্থায়ীভাবে দাগ পড়ে তখন তাকে ক্রনিক পাইলোনেফ্রাইটিস বলে । নীচের মূত্রণালীর ইনফেকশনকে সিস্টাইটিস বলা হয় । এ ধরনের মূত্রণালীর ইনফেকশন প্রতিরোধ করা যায় । মেডিক্যাল প্র্যাকটিসে যে সব জীবাণুঘটিত রোগ দেখা যায় ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন এদের মধ্যে অন্যতম ।
ইপিডেমিওলজি বা Epidemiology কি ?
ইপিডেমিওলজি : Epidemiology পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা চারগুণ বেশী । ১৫ থেকে
বছরের মহিলারাই এতে বেশি ভোগে । মহিলাদের মধ্যে এর প্রকোপ শতকরা ২০ ভাগ । শৈশবের প্রথম দিকে এ রোগ বালকদের মধ্যে বেশী দেখা দেয় । তার কারণ হলো মূত্ৰণালীতে জন্মগত বৈকল্য ইউরেথ্রার ভাল্ব এবং ব্ল্যাডার নেক অবস্ট্রাকশন ইত্যাদি । বয়োবৃদ্ধির সাথে সথে মেয়েদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ দেখা দেয় এবং স্কুলের মেয়েদের মধ্যে গিয়ে দাড়ায় শতকরা ১ থেকে ২ ভাগ । বয়স যখন ৪০ বৎসরের বেশী হয় তখন আবার পুরুষদের প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে প্রস্রাবে বাঁধার সৃষ্টি হয়, ফলে বয়ষ্ক পুরুষদের এ রোগের মাত্রা বেড়ে যায় ।
প্যাথজেনেসিস : Pathogenesis of UTI
ইসকেরেসিয়া কোলাই E.coli এ রোগের অন্যতম প্রধান জীবাণু । শতকরা ৮০-৯০ ভাগ ক্ষেত্রে বাইরের রোগীর তুলনায় হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে স্ট্রেপটো ফিকালিস, প্রোটিয়াস, স্টেফ অরিয়স, ক্লেবসিলা এরোজেনস এবং সিডোমোনাস জনিত ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) এর প্রকোপ বেশী । ব্যাকটেরিয়াল কলোনাইজেশনের (জীবাণুর বৃদ্ধি) এবং এসেনডিং ইনফেকশনে (উর্দ্ধবাহী ইনফেকশন) এটাই ক্রমাগত প্রমাণিত হচ্ছে যে, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের বিশেষ করে বার বার ইনফেকশনের প্যাথজেনেসিসের বেলায় পেরিনিয়াল এবং ইউরিনারি ব্লাডার রোগজীবাণুর সংযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এতে ‘এ’ বি’ ‘ও’ ব্ল্যাড গ্রুপ, সিক্রেটর স্টেটাস এবং পি ব্ল্যাড জানা যায় । এটা পরিষ্কারভাবে দেখানো হয়েছে যে, পি ব্লাড গ্রুপের যারা ইনফেকশনে আক্রান্ত হয় তাদের মূত্রণালীতে ফ্রিমব্রিয়েটেড ই কলাই’ এর লেগে থাকার স্থান রয়েছে ।
।
আরও জানুনঃ গর্ভাবস্থায় যে সব ভিটামিন খাওয়া যাবে না এবং কোন ভিটামিন খাওয়া যাবে ?
রোগ জীবাণুর পেরিনিয়াম থেকে মহিলাদের ছোট মূত্রনালীতে (ইউরেথ্রা) দিয়ে ব্লাডারে প্রবেশ করে এবং সংক্রমন শুরু হয় । যৌন সক্রিয় মহিলাদের ইউরেথ্রাল ইনজুরিই হল প্রধান কারণ যা কোন রোগ জীবাণু উপর দিকে প্রবেশ করতে সাহায্য করে । ব্লাডার থেকে ভেসাইকো ইউরেটারিক রিফ্লাক্সের ফলে জীবাণুর উপর দিকে প্রবেশের ফলে কিডনীর সংক্রমণ হয় । যদিও এ ধরনের সংক্রমন-ই সাধারণত হয়ে থাকে তবে রক্ত বাহিত জীবাণু দ্বারাও কিডনী সংক্রমন হয় । বিশেষ করে যখন কিডনীতে আগের কোন অসুখ বিদ্যমান থাকে এবং মূত্রণালীতে বাঁধা বা অবস্ট্রাকশন থাকে ।
আরও জানুনঃ গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে কি হয় ?গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় ?
ক্রনিক পাইলোনেফ্রাইটিস কি ?
প্রথমে কিডনীতে ছোট ছোট দাগ হয় পরে ওয়েজের মতো বড় একটা দাগ হয় যার মাথার দিকে মেডালার দিকে থাকে । শিশুদের ভেসিকো ইউরেটারিক রিফ্লাক্সের বেলায় ক্রনিক পায়লোনেফ্রাইটিস ও বারবার হয়। ইউরিনারি ইনফেকশনের (Recurrent UTI) সম্পর্কটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় । সেটা বয়স্কদের বেলায় ভাল বোঝা যায় না ।
ন্যাচারাল হিস্ট্রি
শতকরা প্রায় পঞ্চাশ ভাগ মহিলা বিশেষ করে যৌন সক্রিয় বয়সে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের (ইউটিআই) উপসর্গে ভুগতে থাকে (যেমন: প্রস্রাবে কষ্ট, ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাব করার সময় জ্বালা ইত্যাদি) । কিন্তু শিশুর বেলায় যদি চিকিৎসকেরা সচেতন না থাকেন তবে রোগ নির্ণয়ে ভুল হতে পারে । কেননা শিশুরা উপসর্গ বলতে পারে না ।
শিশুদের কিডনি রোগের লক্ষণ কি ?
সাধারণ উপসর্গগুলো হল
১. দূর্বলতা,
২. খাওয়ার অরুচি,
৩. বার বার জ্বর হওয়া
৪. বিছানায় প্রস্রাব করা
৫. শিশুর ঠিকমত বেড়ে না ওঠা
৬. পেটের পীড়া (অজীর্ণ ডায়রিয়া প্রভৃতি) ।
রিকারেন্স বা বারবার ইনফেকশন হওয়া ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের সবচেয়ে বিরক্তিকর দিক হল এটার পুনরাগমন বা রিকারেন্স । যেসব মহিলাদের ইউরিনারি ইনফেকশন হয়েছে তাদের শতকরা ৫০ ভাগের প্রথম ১ বৎসরের মধ্যে পুনরায় ইনফেকশন হয় । যখন একই জীবাণু দ্বারা সংক্রমন হয় তখন রিকারেন্সকে রিলাপ্স বলে ।
Read More: what is polycystic ovary syndrome (pcos) & types of pcos ? how to get rid of polycystic ovary syndrome cure naturally ?
উপসর্গহীন জীবাণু নিঃসরণ
যখন উপসর্গ ছাড়া কোন ব্যক্তির প্রস্রাবের সাথে সুনির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মাত্রায় জীবাণু বের হতে থাকে ১ ও ১০ প্রতি মিলি লিটারের ফলাফল কি হতে পারে এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে ।
শৈশবকাল
এ বয়সে উপসর্গহীন জীবাণু নি:স্বরণকে অতি গুরুত্ব সহকারে চেনা উচিত । কারণ এক সময় এটা ক্রনিক পায়লোনেফ্রাইটিসে রূপ নিতে পারে ।
স্কুলে পড়া মেয়েরা শতকরা ১ থেকে ২ ভাগ স্কুলের মেয়েরা উপস্বর্গহীন জীবাণু নি:স্বরণ করতে থাকে । যদি এসব মেয়েদের চিকিৎসা করা না হয় তবে তারা ভবিষ্যতে বিশেষ করে বিয়ের পর এবং গর্ভাবস্থায় ক্রনিক পায়লোনেফ্রাইটিস রোগে ভুগতে পারে । এসব মেয়েদের ভেসিকো ইউরেটারিক রিফ্লাক্সে ভোগার প্রবণতাও থাকে ।
কিডনি ভালো রাখার উপায় কি ?
- প্রচুর পানি পান করুন;
- নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে;
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন;
- ধূমপান পরিহার করুন;
- ব্যথার ওষুধ কম খেতে হবে;
- রক্তে গ্লুকোজ এর মাত্রা কমান;
কিডনি ভালো রাখার উপায় ভালো রাখার জন্য অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
ডিসক্লেইমার: এখানে উপরোক্ত হেলথটিপস এবং পরামর্শগুলি অনুসরণ করার পূর্বে , ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
রিলেটেড ট্যাগঃ কিডনি ভালো রাখার উপায়,শিশুদের কিডনি রোগের লক্ষণ কি ?,কিডনী ও মূত্রণালীর সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই কি ?কিডনি রোগের লক্ষণ সমূহ কি কি?,নেফ্রাইটিস কি ?, নেফ্রাইটিস কেন হয় ?, নেফ্রাইটিস এর সাধারণ কারণ কি ? ,কিডনি ভালো রাখার উপায় কি ?