পোস্ট সামারীঃ
- গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস কি ? মর্নিং সিকনেসে স্ত্রীর চিকিৎসা ?
- গর্ভাবস্থায় কি কি সমস্যা হয় বা গর্ভাবস্থায় ছোটখাটো রোগ কি কি ?
- প্রেগনেন্সি ব্যায়াম ?
- গর্ভাবস্থায় কেগেল ব্যায়াম ?
- গর্ভাবস্থায় হালকা ব্যায়াম ?
Table of Contents
গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস কি ? মর্নিং সিকনেসে স্ত্রীর চিকিৎসা ?
গর্ভাবস্থায় ছোটখাটো অসুস্থতা তাদের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :
গর্ভাবস্থায় বেশ কতগুলো ছোটখাটো অসুস্থতা দেখা দিতে পারে । একটু যত্নবান হলেই এদের বহুলাংশে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করা সম্ভব । নিম্নে এ . ধরনের কিছু ছোটখাটো অসুস্থতা ও তাদের সমাধান দেওয়া হলো । প্রাতকালীন অসুস্থতা (Morning Sickness) : এটি প্রায় শতকরা ৫০% ভাগ গর্ভবতী মায়েদের মধ্যেই দেখা যায় । এটি গর্ভবতী মায়ের শরীরের হরমোন বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে । এতে বমি বমি ভাব বা বমি হয় । এই বমিজনিত সমস্যা সাধারণত সকালবেলা ঘুম থেকে উঠলেই বেশি হয় বলে একে প্রাতঃকালীন অসুস্থতা বলে । এই অসুস্থতা ৩-৪ মাস থাকতে পারে । এর পর এটি এমনিতেই সেরে যায় । নিম্নরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এই অসুস্থতা থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে ।
infertility আপডেট তথ্য পেতে google news” অনুসরণ করুন।
১. ঘুম থেকে ধীরেসুস্থে ওঠা ভাল । শুকনা বিস্কুট বা টোস্ট করা পাউরুটি দিয়ে প্রাতঃরাশ করা উত্তম । এর সাথে একটু গরম চা খাওয়া যেতে পারে ।
২. বারেবারে অল্প পরিমাণ খাবার খাওয়া উত্তম । তৈলাক্ত ও মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত ।
৩. প্রচুর পানি বা পানীয় খেতে হবে । তবে পানি বা পানীয় আহারের সাথে বা আহারের ঠিক পরপরই না খেয়ে, খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে খাওয়া ভাল ।
৪. কড়া বা উগ্র-গন্ধযুক্ত খাবার রান্না থেকে বিরত থাকতে হবে । উপরে বর্ণিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করার পরও যদি এই অসুস্থতা চলতে থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে ।
আরও জানুনঃ গর্ভাবস্থায় যে সব ভিটামিন খাওয়া যাবে না এবং কোন ভিটামিন খাওয়া যাবে ?
গর্ভাবস্থায় কি কি সমস্যা হয় বা গর্ভাবস্থায় ছোটখাটো রোগ কি কি ?
কোষ্ঠবদ্ধ : কোষ্ঠবদ্ধতা গর্ভাবস্থায় একটি প্রধান সমস্যা । কিন্তু এর জন্য ভয়ের কোন কারণ নেই । গর্ভকালীন সময়ে শরীরে বর্ধিত হরমোনের জন্যই এই সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন ১০-১২ গ্লাস পানি, প্রচুর সবুজ শাক- সবজি ও ফলমূল খেলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়া ইসুফগুলের ভূসির সরবত এক্ষেত্রে বেশ উপকারি । প্রয়োজনে এ শরবত দিনে বেশ ক’বার খাওয়া যেতে পারে ।
প্রস্রাবের সমস্যা : এই সমস্যা গর্ভকালীন সময়ের প্রথম ও শেষের দিকে বেশি হয়ে থাকে । প্রস্রাব অনেক বেশি হয় বা বারবার হয় । এমনকি যিনি রাতে কখনও ঘুম থেকে উঠে টয়লেটে যান না তাকেও রাতে ১-২ বার ঘুম থেকে উঠতে হয় । সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এই সমস্যা সাধারণত থাকে না । যদি থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু এই ঘনঘন প্রস্রাবের সাথে যদি আরও অন্যান্য উপসর্গ থাকে, যেমন প্রশ্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া, তলপেটে ব্যথা ও জ্বর, তবে সে ক্ষেত্রেও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন ।
আরও জানুনঃ গর্ভাবস্থায় যে সব ভিটামিন খাওয়া যাবে না এবং কোন ভিটামিন খাওয়া যাবে ?
স্তনের সমস্যা : গর্ভধারণের ১০ সপ্তাহের মধ্যে স্তনগুলো দৃশ্যতই বড় হয়ে ওঠে এবং স্তনে ব্যথাও হতে পারে । স্তনের বোঁটা ও তাদের চারপাশের চামড়া গাঢ় বাদামী রং ধারণ করে । প্রত্যহ গোসলের সময় স্তনগুলো অল্প একটু সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত । সবসময়ের জন্যই ব্রা পরা উচিত । এতে স্তন দুটি নুইয়ে পড়ে না । একবার এতগুলো নুইয়ে পড়লে তখন শত চেষ্টায়ও এতগুলো ঠিক করা যায় না । দ্বিতীয়ত: ব্রা ব্যবহারের ফলে স্তনের ব্যথাও অনেকাংশে লাঘব হয় । যদি কারো স্তনের বোঁটা ছোট থাকে অথবা ভেতরের দিকে ঢুকানো থাকে, তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত । তা না হলে পরবর্তীতে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় সমস্যা হতে পারে । এক্ষেত্রে ব্রেস্ট শীলড্স নামক একপ্রকার ছোট জিনিস ব্যবহার করলে স্তনের এই সমস্যা দূর হয় । গর্ভকালীন সময়ের শেষের দিকে স্তনের বোঁটা দুটিকে একটু তেল দিয়ে ম্যাসেজ করলে এগুলো নমনীয় থাকে । ফলে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে বিশেষ সুবিধা হয় ।
যৌননালী হতে নিঃসৃত রস (Vaginal Secretions) : গর্ভাবস্থায় যেহেতু শরীরের প্রায় প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি পায় সেহেতু যৌননালী হতেও নিঃসৃত রসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার । তবে এই নিঃসৃত রস যদি চুলকানীর সৃষ্টি করে বা দুর্গন্ধযুক্ত হয়, তবে তা ডাক্তারকে জানাতে হবে। কোন অবস্থাতেই গর্ভাবস্থায় যৌননালীতে ডুস দেওয়া উচিত নয় । যদি উপরোল্লিখিত উপসর্গগুলো ছাড়া শুধু অধিক নিঃসৃত রসই অসুবিধার কারণ হয়, তবে প্যাড পরে থাকলে এই অসুবিধা হতে আপাতত মুক্তি পাওয়া যাবে। অবশ্য সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এই নিঃসৃত রসের পরিমাণ কমে যায় ।
বদহজম ও বুক জ্বালা : এই সমস্যা দুটি সাধারণত গর্ভকালীন সময়ের শেষের দিকে হয় । পাকস্থলীর উপরের মুখটি একটু ঢিলা হয়ে যাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে নির্গত রস, যাতে এসিড থাকে, তা খাদ্য নালীতে ঢুকে পড়ে আর এতেই বুক জ্বালার সৃষ্টি হয় । অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া, শোয়ার সময় মাথা ও পিঠের পিছনে বালিশ দিয়ে মাথার দিক খাড়া করে শোয়া এবং ভাজি ও মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করলে এই সমস্যা থেকে বহুলাংশে মুক্তি পাওয়া যায় । যদি উপরোক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করার পরেও এই সমস্যা চলতে থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।
আরও জানুনঃ গর্ভাবস্থায় বা প্রেগনেন্ট হলে নারীর শরীরের পরিবর্তন বা লক্ষণ দেখা যায় ?
কোমর ব্যথা (Backache) : কোমরের ব্যথা আর একটি গর্ভকালীন সমস্যা। এটিও সাধারণত গর্ভকালীন সময়ের শেষের দিকে দেখা দেয় । শরীরের হরমোনের বৃদ্ধির ফলে হাড় বন্ধনকারী রসিগুলো নরম ও ঢিলা হয়ে পড়ে। তার ওপর সন্তানের বৃদ্ধির ফলে সামনের দিকে পেটকে ঝুলিয়ে শত হাঁটার জন্যই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। দাঁড়ানো ও হাঁটার সময় কোমর ও মেরুদণ্ডকে সোজা করে হাঁটতে হবে । পেটে সন্তান আছে এর জন্য পেটকে সামনের দিকে ঠেলে হাঁটার প্রয়োজন নেই । দ্বিতীয়ত: এই সময় উঁচু হীলের জুতা পরিহার করতে হবে। এ দুটি বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হলে কোমর ব্যথা অনেকখানি লাঘব হবে । মেঝে থেকে কোন কিছু নেয়ার সময় কখনো কোমরকে বাঁকানো উচিত নয় । বরং হাঁটু গেড়ে তা করা উচিত । গরম পানির ব্যাগে (Hot water Bottle) গরম পানি নিয়ে সেঁক দিলেও ব্যথা কিছুটা উপশম হয় । শোয়ার বিছানা যদি নরম হয়, তবে এর নিচে একটা হার্ডবোর্ড দিলে বিছানা শক্ত হয়, যা ব্যথা উপশমে সাহায্য করে । খিল ধরা (Cramp) : ক্র্যাম্প বা খিল ধরা সাধারণত পায়ের মাংশপেশীতেই বেশি দেখা যায় । রাতে এই সমস্যা বেশি হয় । শোয়ার সময় পায়ের নিচে নরম বালিশ দিলে ও পা ম্যাশেজ করলে এই সমস্যা দূর হয় । স্ফীত শিরা এবং অর্শরোগ : গর্ভাবস্থায় শরীরের বিভিন্ন অংশের, বিশেষ করে পায়ের শিরাগুলো স্ফীত হয়ে যেতে পারে । এটি বংশানুক্রমেও হতে পারে । এর প্রতিকার হিসাবে বেশিক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকাকে পরিহার করতে হবে । এতেও উপশম না হলে ইলাস্টিকের মোজা ব্যবহার করা যেতে পারে ।
আরও জানুনঃ প্রসব পরবর্তী বিপদ চিহ্ন বা প্রসব পরবর্তী জটিলতা ? নবজাতকের বিপদ চিহ্ন কয়টি ও কি কি?
পায়খানার রাস্তা ও তার আশেপাশের শিরাগুলো স্ফীত হলে তাকে অর্শরোগ বলে। এতে পায়খানা করার সময় রক্ত যেতে পারে । কোষ্ঠবদ্ধতা এই সমস্যাকে আরও প্রকট করতে পারে । এর জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কোষ্ঠবদ্ধতা না হয়। খুব অসুবিধা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত । সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এই অসুবিধাগুলো সাধারণত দূর হয়ে যায় । শ্বাসকষ্ট : এটিও গর্ভকালীন সময়ের শেষের দিকের একটি সমস্যা। মাতৃগর্ভে শিশুর বৃদ্ধির ফলে ফুসফুস সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা পায় না। আর এর ফলেই শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি হয়। এর প্রতিকার হিসেবে নিজেকে অধিক ক্লান্ত করা উচিত নয়। সাধারণ কাজকর্ম ধীরেসুস্থে করা উচিত । ক্লান্তি অনুভূত হলে বিশ্রাম নেওয়া উচিত ।
প্রেগনেন্সি ব্যায়াম ? গর্ভাবস্থায় কেগেল ব্যায়াম ?
গর্ভাবস্থায় বিশ্রাম ও ব্যায়াম : গর্ভাবস্থায় ঠিকমতো বিশ্রাম নেওয়া অতি প্রয়োজনীয় বিষয় । বিশেষ করে গর্ভকালীন সময়ের প্রথম ও শেষের দিকে যখন মায়েরা সাধারণত ক্লান্তি অনুভব করে থাকেন, তখন বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমালেই চলবে । তাছাড়া দুপুর বেলায়ও ১-২ ঘণ্টা বিছানায় বিশ্রাম নেওয়া ভালো । শোয়ার সময় কাত হয়ে শোয়া ভালো । চিৎ হয়ে শুলে শরীরের নিম্নাংশ হতে রক্ত চলাচলে বাধা পড়ে ।
শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে অন্য সময়ের মতো গর্ভকালীন সময়েও ব্যায়াম করা প্রয়োজন । তবে মনে রাখতে হবে, ব্যায়াম করা উত্তম তবে অতিরিক্ত পরিশ্রম নিঃসন্দেহে ভালো নয়। ঘরের কাজ করাই একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য উত্তম ব্যায়াম। এ ছাড়াও বিকালবেলায় খোলা মাঠে একটু বেড়ানো যেতে পারে ।
গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে গর্ভকালীন সময়ের শেষের দিকে ভারী জিনিস বহন করা ঠিক নয় । যদি কোনো কারণে কোনো ভারী জিনিস কখনো বহন করতে হয়, তবে তা বুক বরাবর শরীরের সাথে লাগিয়ে বহন করা অনেকটা নিরাপদ ।
আরও জানুনঃ পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কি ? পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম লক্ষণ ?
গর্ভাবস্থায় হালকা ব্যায়াম ?
রিলাকজেশান ব্যায়াম : সন্তান প্রসবের সময় নিকটবর্তী হতে থাকলে মা এই ব্যায়াম করতে পারেন। এই ব্যায়াম করার নিয়ম হলো, বিছানায় শুয়ে সন্তানসম্ভবা মা মনে মনে কল্পনা করবেন যে, তার প্রসব ব্যথা উঠছে এবং এই ব্যথা খুবই তীব্র। আর এ সময়ে তিনি শরীরটাকে সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে বড় বড় নিশ্বাস নেবেন । দিনে দু-তিন বার এই ব্যায়াম করা যেতে পারে । এই ব্যায়ামের ফলে সন্তানসম্ভবা মায়ের পক্ষে প্রসব ব্যথা সহ্য করা যেমন সহজ হয়, তেমনি খুব তাড়াতাড়ি তার জরায়ুর মুখ খুলে যায় এবং সন্তান দ্রুত প্রসব হয় ।
চাকুরি : চেয়ারে বসে কাজ করতে হয়, এ রকম চাকুরি গর্ভাবস্থায় চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে । যাদের গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ হয় বা যাদের বারবার সত্ত নি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ইতিহাস আছে, তাদেরকে অবশ্যই এ ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।
ভ্রমণ : প্রাইভেট কারে, ট্রেনে বা উড়োজাহাজে ভ্রমণ এই সময় মোটামুটি নিরাপদ । তবে ভ্রমণের আগে মনে রাখতে হবে যে, আপনি যে স্থানে যাবেন, সেখানে প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে কিনা। গর্ভাবস্থায় ভ্রমণের পূর্বে আপনি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন ।
রিলেটেড ট্যাগঃ গর্ভাবস্থায় ছোটখাটো রোগ কি কি ?, গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস কি ?, মর্নিং সিকনেসে স্ত্রীর চিকিৎসা ? ,গর্ভাবস্থায় কি কি সমস্যা হয় ? ,গর্ভাবস্থায় হালকা ব্যায়াম ?, প্রেগনেন্সি ব্যায়াম ?, গর্ভাবস্থায় কেগেল ব্যায়াম ?, গর্ভাবস্থায় কি সমস্যা হয় ?, গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস কি,